[নতুন] Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali – ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী : ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষের বাংলাতে অনেক মহৎ মানুষের জন্ম হয়েছিল। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের শিক্ষা এবং সমাজ সংস্কারে তার অবদান অসামান্য। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন বিরল গুণের অধিকারী।
Table of Contents
Ishwar Chandra Vidyasagar Jiboni Bengali
নাম | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর |
জন্ম | 26th September 1820 (মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রাম) |
মৃত্যু | 29th July, 1891 (71 বছর বয়সে) |
বাবার নাম | ঠাকুর দাস বন্দ্যোপাধ্যায় |
মায়ের নাম | ভগবতী দেবী |
স্ত্রীর নাম | দীনময়ী দেবী |
পুত্রের নাম | নারায়ণচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
ধর্ম | হিন্দু |
সমাজ সংস্কার | বিধবা বিবাহ আইন পাশ (26th July, 1856) |
প্রতিষ্ঠাতা | বিদ্যাসাগর কলেজ, এছাড়াও তিনি সারাজীবনে ৫০ টির বেশী স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন |
উপাধি | বিদ্যাসাগর, বাংলা গদ্যের জনক, করুনার সাগর |
সাহিত্য কর্ম | বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগ ও দ্বিতীয় ভাগ, বোধোদয়, অখ্যান মঞ্জুরি, সিতার বনবাস, ভ্রান্তি বিলাস, বেতাল পঞ্চবিংশতি, কথামালার গল্প, শকুন্তলা |
প্রভাবিত করেছেন | মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী, সুকুমার সেন, নবীনচন্দ্র সেন, স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু অন্যান্য |
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম
Pandit Ishwar Chandra Vidyasagar ১৮২০ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বাবা ও মা
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বাবার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম ভগবতী দেবী। তার মা ভগবতী সেই কুসংস্কারচ্ছন্ন যুগেও ছিলেন আধুনিক চিন্তার অধিকারিণী।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিবার
Ishwar Chandra Vidyasagar Rachana: পান্ডিত্যের জন্য তাদের পরিবারের খ্যাতি ছিল সেই আগের আমল থেকেই। কিন্তু আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো ছিল না।আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে পিতা ঠাকুরদাস কে অল্পবয়সে বীরসিংহ গ্রাম ছেড়ে অর্থ উপার্জনের জন্য কলকাতায় যেতে হয়।
সেখানে নামমাত্র বেতনে এক ব্যবসায়ীর খাতা লেখার কাজে নিযুক্ত হন তিনি।ন্যায় নিষ্ঠা, নীতি পরায়নতা, অধ্যবসায় ও স্বাধীনচেতা মনোভাব সম্বল করে কালক্রমে ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় একদিন সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।পিতার ওইসব গুণ পরবর্তীকালে পুত্র ঈশ্বরচন্দ্রের মধ্যেও পূর্ণ মাত্রায় বিকশিত হয়েছিল।
বিদ্যাসাগরের ছেলেবেলা
কঠিন দারিদ্র্যের মধ্যে মানুষ হলেও ঈশ্বরচন্দ্রের মনোবল ছিল অসীম এবং দৃঢ়। ছেলেবেলায় অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র। তিনি কতখানি মেধাবী ছিলেন সে সম্পর্কে একটি গল্প আছে।তিনি অত্যন্ত অল্প বয়সে একবার পায় হেঁটে বাবার সাথে কলকাতায় গিয়েছিলেন। পথে মাইলস্টোনের সংখ্যার হিসাব গুনতে গুনতেই শিখে ফেলেন ইংরেজি গণনা।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রাথমিক শিক্ষা
তিনি গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে পড়াশোনা ও নিয়মানুবর্তিতায় কখনোই অমনোযোগী হননি।তিনি গ্রামের পাঠশালার পড়াশোনা শেষ করে মাত্র আট বছর বয়সে গ্রামের বাড়ি থেকে পিতার সঙ্গে পায়ে হেঁটে কলকাতায় এসেছিলেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উচ্চ শিক্ষা
- তারপর ১৮২৯ সালের ১লা জুন তিনি কলকাতার সরকারি সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন।
- অপরিসীম অধ্যাবসায় ও নিষ্ঠার সঙ্গে পড়াশোনা করে তিনি স্কুলের পরীক্ষায় কৃতিত্বের পরিচয় দেন এবং মাসিক ৫ টাকা বৃত্তি লাভ করেন।
- তার পড়াশোনার প্রতি অনুরাগ এর কাহিনী আজও কিংবদন্তি হয়ে আছে।
- তেলের অভাবে ঘরে আলো জ্বালাতে পারতেন না বলে পথের পাশে গ্যাসের বাতির নিচে দাঁড়িয়ে পড়াশোনা করতেন তিনি।
- তিনি গভীর রাত পর্যন্ত এভাবেই পথের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন পড়া তৈরি করতেন।
- এমনি অবিরাম কষ্টের মধ্যেই তাকে স্কুলের পড়াশোনা চালাতে হয়েছিল।
- সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণ শ্রেণীর পাঠ কৃতিত্বের সাথে শেষ করে ঈশ্বরচন্দ্র ইংরেজি শ্রেণীর পড়া শুরু করেন।
- 1833 থেকে 1835 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সাহিত্য শ্রেণীর পাঠ সমাপ্ত করেন। সাহিত্য শ্রেণীতে তিনি কৃতি শিক্ষক জয় গোপাল তর্কালঙ্কার কাছে শিক্ষা লাভ করেন।
- সংস্কৃত কলেজে বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে পুনরায় কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
- 1833 থেকে 1835 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সাহিত্য শ্রেণীর পাঠ সমাপ্ত করেন। সাহিত্য শ্রেণীতে তিনি কৃতি শিক্ষক জয় গোপাল তর্কালঙ্কার কাছে শিক্ষা লাভ করেন।
- 1835 সালে বিদ্যাসাগর অলঙ্কার শ্রেণীতে ভর্তি হন।
- এই শ্রেণীতে তিনি এক বছর পড়াশোনা করেন। ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম হয়ে প্রচুর সুনাম অর্জন ও পুরস্কার লাভ করেন।
- এরপর তিনি বেদান্ত শ্রেণীতে ভর্তি হন। এই শ্রেণীতেও তিনি কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
- এরপর ভর্তি হন স্মৃতি শ্রেণীতে। এই শ্রেণীতে তিনি অসাধারণ সাফল্য দেখান।
সংস্কৃত কলেজে একাদিক্রমে 12 বছর অধ্যয়ন করে ব্যাকরন, কাব্য, অলংকার, বেদান্ত, স্মৃতি এবং জ্যোতিষ শাস্ত্রে পান্ডিত্য অর্জন করেন তিনি।বিদ্যাসাগর ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং “বিদ্যাসাগর” উপাধি পরীক্ষার শেষে প্রশংসাপত্রে তার নামের আগে ব্যবহার করা হয়।বিদ্যাসাগর উপাধি কেবলমাত্র তার জন্যই যথার্থ ছিল।
Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali বিদ্যাসাগর, জ্ঞানের সাগর, করুণার সাগর, মানবতার সাগর, বিবেকের সাগর, প্রগতিশীলতার সাগর সব বিশেষণই তার ক্ষেত্রে যথাযথ ও সুপ্রযোজ্য বিদ্যাসাগর যখন সংস্কৃত কলেজ ত্যাগ করেন তখন তার বয়স 21 বছর।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্ত্রী
1835 খ্রিস্টাব্দে মাত্র 15 বছর বয়সে বিদ্যাসাগর বিয়ে করেন। সে সময় অবশ্য সবার অল্প বয়সেই বিয়ে দেয়ার একটি রীতি ছিল।স্বাবলম্বী বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কোন রকম প্রশ্ন ছিল না সেসময়।বিদ্যাসাগরের স্ত্রীর নাম ছিল দীনময়ী দেবী।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কর্মজীবন
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দের একুশে ডিসেম্বর 21 বছর বয়সে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন।তিনি ওই সময় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা বিভাগের হেড পন্ডিতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।তিনি একই সাথে বিদ্যালয় পরিদর্শকের দায়িত্বও পালন করতেন।ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পক্ষে এত অল্প বয়সে এমন গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভ করা সম্ভব ছিল না। ওই কলেজের সেক্রেটারি মিস্টার জি টি মার্শালের ঐকান্তিক আগ্রহ, চেষ্টা ও বিশেষ সুপারিশে সেটা সম্ভব হয়েছিল।
বিদ্যাসাগর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে পাঁচ বছর শিক্ষকতা করার পর 1846 সালে সংস্কৃত কলেজে এসিস্ট্যান্ট পদে যোগদান করেন।সেই সময় ওই কলেজের সেক্রেটারি ছিলেন রসময় দত্ত।চাকরি গ্রহণ করার পর গোটা সংসারের দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধে তুলে নেন।
পিতা চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করায় তাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন তিনি।এরপর তিনি নিজের ছোট ভাইকেও কলকাতায় নিজের কাছে এনে পড়াশোনা করাতে লাগলেন।নিজের আত্মীয় ছাড়াও অনেক ছাত্র তার বাসগৃহে থেকে লেখাপড়া করত।এদিকে কর্মক্ষেত্রে তার ক্রমশ উন্নতি হতে থাকে। আপন বুদ্ধিমত্তা ও পান্ডিত্বের পরিচয় প্রদান করে তিনি সংস্কৃত কলেজের সহকারী অধ্যাপক, অধ্যাপক, পরে অধ্যক্ষের পদে অধিষ্ঠিত হন।
1846 খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির বিধানের জন্য একটি মূল্যবান রিপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করেন।এ বিষয়ে সেক্রেটারি রসময় দত্তের সাথে তার মতবিরোধ দেখা দেয়।এই মতবিরোধের কারণেই তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করে 1847 সালের 16 জুলাই ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে প্রত্যাবর্তন করেন।
সংস্কৃত কলেজ কর্তৃপক্ষ কিছুদিনের মধ্যেই তাদের ভুল বুঝতে পারে।তারা এসে ঈশ্বরচন্দ্র কে আবার সংস্কৃত কলেজে ফিরে যাবার অনুরোধ করেন।সংস্কৃত কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ও কলেজের পুনর্গঠন এর বিষয়ে তাকে অবাধ সুযোগ দেওয়া হবে বলে শর্ত দেয়া হয়।যার ফলে তিনি 1850 সালের ডিসেম্বর মাসে কলেজের সাহিত্য সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
1851 সালের 22 জানুয়ারি তিনি নবসৃষ্ট অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন।এরপর তিনি সংস্কৃত কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন।ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয় তার আমলেই।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনাসমগ্র
কর্মজীবনে প্রবেশের পর থেকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সাহিত্য রচনা শুরু হয়। তিনি সাহিত্যে অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।চাকরি থেকে অবসরে যাবার পরেই তিনি একান্ত ভাবে সাহিত্য সাধনায় মনোনিবেশ করেন।অধ্যক্ষ পদের দায়িত্ব পালনের সময় তিনি বাংলা ভাষায় উন্নতমানের পাঠ্যপুস্তক এর অভাব অনুভব করেন। এ সময় তিনি বহু বাংলা গদ্য গ্রন্থ রচনা করেন। তার হাতে পড়েই বাংলা গদ্যরীতি তার আপন পথ খুঁজে পায়।এইজন্য তাঁকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্য সাহিত্যের জনক হিসাবে আখ্যায়িত করেন।
বিদ্যাসাগর সংস্কৃত, হিন্দি এবং ইংরেজি থেকে বহু গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন।
- তাঁর অনুবাদকৃত গ্রন্থের মধ্যে সিতার বনবাস, ভ্রান্তি বিলাস, বেতাল পঞ্চবিংশতি এবং কথামালার গল্প বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
- এসব ছাড়াও তাঁর রচিত বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগ ও দ্বিতীয় ভাগ, বোধোদয় এবং অখ্যান মঞ্জুরি গ্রন্থগুলো আজও বাংলাভাষার গোড়াপত্তনের অপরিহার্য বিষয় বলে বিবেচিত হয়।
- তার রচিত বোধদয় সংস্কৃত কলেজের পড়ানোর জন্য রচিত যা বর্তমান বাংলা সাহিত্যে অনন্য সাধারণ বলে বিবেচিত হয়।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
- কবি কালিদাসের রচিত শকুন্তলা কাব্যের অবলম্বনে রচনা করলেন বাংলা গদ্য শকুন্তলা,
- শেক্সপিয়ারের নাটক কমেডি অফ এররস এর অনুসরণে লিখলেন ভ্রান্তি বিলাস এবং
- রামায়ণ থেকে কাহিনী নিয়ে রচনা করলেন সীতার বনবাস।
তবে তিনি শুধুমাত্র যুগ যুগ ধরে সাহিত্য-সাধনার জন্যই বাংলাভাষাভাষীদের নিকট গ্রহণযোগ্যই নয়, তিনি একজন অসম সাহসি সমাজসংস্কারকও বটে।আর এই জন্যই তিনি হিন্দু সমাজে সবার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সংস্কারমূলক কাজ
স্ত্রী শিক্ষা বিস্তার ও বিভিন্ন স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা
সাহিত্যকর্ম ও সমাজ সংস্কারের পাশাপাশি স্ত্রী শিক্ষা বিস্তারেও তার অশেষ অবদান রয়েছে।সংস্কৃত শিক্ষার সংস্কার, বাংলা শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন এবং স্ত্রীশিক্ষার পত্তন ও প্রসার তার প্রয়াসের এক অক্ষয় কীর্তি।তিনি শিক্ষা বিস্তারে বহু স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
1849 খ্রিস্টাব্দে দেশীয় কয়েকজন ধনী ও শিক্ষিত লোকের সহায়তায় এবং বেথুন সাহেবের উদ্যোগে কলকাতায় স্ত্রী শিক্ষা বিস্তারের সূত্রপাত হয়।ছোটলাট ফ্রেডারিক হেরিডে সাহেবের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি মেদিনীপুর, বর্ধমান, হুগলি এবং নদীয়া জেলার নানা স্থানে অনেকগুলো বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
বিদ্যাসাগর শিক্ষা বিস্তারে ২০ টি মডেল স্কুল ও 35 বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।বিদ্যাসাগর তাঁর মাকে দেবীর মতো শ্রদ্ধা করতেন। তিনি অকাতরে মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতেন।গ্রামের দাতব্য চিকিৎসালয়, বিদ্যালয়গুলো মায়ের ইচ্ছানুসারে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।বিদ্যাসাগরের মাতৃভক্তি গল্প অনেকটা কিংবদন্তির মতো প্রচারিত। জানা যায় ছোট ভাইয়ের বিয়ের চিঠি পেয়ে মাতৃ আদেশ পেয়ে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অধ্যক্ষ মার্শাল সাহেবের কাছ থেকে ছুটি চাইলেন বাড়ি যাবার জন্য।
ইংরেজ অধ্যক্ষ ছুটি দিতে না চাইলে তিনি চাকরি ছেড়ে দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন মাতৃ আদেশ অমান্য করা অসম্ভব বলে।পরে ছুটি পেলে রাতে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। পথে উন্মত্ত দামোদর নদী, আবহাওয়া খারাপ থাকায় নদী পারাপারের জন্য কোন নৌকা পাওয়া গেল না। তখন তিনি নদী সাঁতরিয়ে বাড়িতে এসে পৌঁছালেন। এমনই ছিল তার মাতৃভক্তি।বিদ্যাসাগর কর্তৃপক্ষের সাথে মতবিরোধের কারণে 1858 সালের 3 নভেম্বর 500 টাকার মাসিক বেতনের সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ এবং অন্যান্য সরকারি পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন।
- বিদ্যাসাগর 1856 সালে তত্ত্ববোধিনী সভার অন্তর্ভুক্ত হন।
- 1859 সালে তিনি ক্যালকাটা ট্রেনিং স্কুল স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
- ১৮৬৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয় হিন্দু মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন। বিদ্যাসাগর হন তার সেক্রেটারি।
- 1872 সালে এটিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর এবং 1879 সালে প্রথম শ্রেণীর কলেজে পরিণত করা হয়।
- বর্তমানে এই কলেজের নাম বিদ্যাসাগর কলেজ Vidyasagar College।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন পরের দুঃখে অতি কাতর।মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রচুর অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন। কবি নবীনচন্দ্র সেনও যৌবনে বিদ্যাসাগরের অর্থে লেখাপড়া করেছিলেন।বিদ্যাসাগর সহজ সরল জীবন যাপন করতে ভালোবাসতেন। সাদা পোশাকে গায়ে মোটা চাদর এবং চটি জুতো ছিল তার একমাত্র পরিচ্ছদ।বিদ্যাসাগরের উল্লেখযোগ্য কীর্তি গুলোর মধ্যে সমাজ সংস্কারমূলক কাজগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বিধবা বিবাহ আইন পাশ
তিনি বিধবা বিবাহের পক্ষে শাস্ত্রীয় প্রমাণ উপস্থাপন করে 1885 সালের জানুয়ারি মাসে বিধবা বিবাহের পক্ষে সওয়াল জবাব শুরু করেন এবং বিধবা বিবাহ প্রচলন হওয়া উচিত কিনা এই বিষয়ে একটি পুস্তক প্রণয়ন করেন।
হিন্দু রক্ষণশীল সমাজ বিধবা বিবাহের তীব্র বিরোধীতায় মারমুখী হয়ে ওঠেন।1855 সালের অক্টোবর মাসে বিরুদ্ধবাদীদের অপ তৎপরতার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবার জন্য “একই শিরা” নামে আর একটি পুস্তক প্রকাশ করেন।1855 সালের 4 অক্টোবর বিধবা বিবাহ আইন পাস করার জন্য তৎকালীন ভারতের ব্রিটিশ সরকারের কাছে তিনি আবেদনপত্র পেশ করেন।
আবেদনপত্রের সাথে তিনি বিধবা বিবাহ আইনের একটি খসড়াও সংযুক্ত করে দিয়েছিলেন।রাজা রাধাকান্ত দেব এর নেতৃত্বে বিরোধী শিবির থেকেও সরকারের কাছে বিপরীত একটি আবেদনপত্র দাখিল করা হয়।১৮৫৫ সালের 17 নভেম্বর খসড়াটি গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া কাউন্সিলে উপস্থাপিত হয়।গভীর বিচার বিশ্লেষণের পর ব্যবস্থাপক সভা কর্তৃক বিধবা বিবাহ আইনের খসড়াটি গৃহীত হয়।1856 সালের 26 জুলাই গভর্নর জেনারেলের সম্মতিক্রমে এটি আইনে পরিণত হয়।
অন্যান্য সমাজ সংস্কারমূলক কাজ
- Ishwar Chandra Vidyasagar কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।
- তিনি হতদরিদ্র মহিলাদের সেবার সহায়তা দিয়ে বাঁচানোর জন্য হিন্দু ফ্যামিলির Gratuity Fund গঠন করেন।
- তিনি চির দিন কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি আর ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে আপসহীনভাবে লড়াই করে গেছেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অন্যরা যা বলেছেন
বাঙালি জাতি সর্বপ্রথম বড় হবার, যোগ্য হবার, মানবিক হবার, আধুনিক, প্রগতিশীল ও বিশ্বজনীন হবার দৃষ্টান্ত খুঁজে পেয়েছিলেন বিদ্যাসাগরের মধ্যে। Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali.
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিদ্যাসাগর সম্বন্ধে বলেছেন, “তিনি হিন্দু ছিলেন না, বাঙালি ব্রাহ্মণ ছিলেন না, ছিলেন মানুষ।“ এই মন্তব্যে তাৎপর্য অপরিসীম। কারণ কারো যথার্থ মানুষ হওয়া সহজ কথা নয়।
- ডক্টর সুকুমার সেন বলেছেন, “বিদ্যাসাগরের আগে বাংলা গদ্যের চল ছিল, চাল ছিলনা।“
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে মহাত্মা গান্ধী বলেছেন, “আমি যে দরিদ্র বাঙ্গালী ব্রাহ্মণকে শ্রদ্ধা করি তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।“
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পুরস্কার ও সম্মান
- বিশাল ও বৈচিত্র্যময় কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ বিদ্যাসাগর 1864 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য নির্বাচিত হন।
- 1880 খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তাঁকে CIE উপাধিতে ভূষিত করে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মৃত্যু
কঠিন পরিশ্রম জনিত কারণে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্বাস্থ্য আস্তে আস্তে ভেঙ্গে পড়ে।শেষ জীবনে তিনি বিহারের অন্তর্গত করমাটারে কাটান।সাঁওতালদের অনাড়ম্বর জীবনযাপন তাকে মুগ্ধ করে। তাদের অবহিত অবস্থা দেখে তাদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।এই মহামতি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৯১ সালের ২৯শে জুলাই ৭১ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন।
আমাদের শেষ কথা
তাই বন্ধুরা, আমি আশা করি আপনি অবশ্যই একটি Article পছন্দ করেছেন([নতুন] Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali – ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী )। আমি সর্বদা এই কামনা করি যে আপনি সর্বদা সঠিক তথ্য পান। এই পোস্টটি সম্পর্কে আপনার যদি কোনও সন্দেহ থাকে তবে আপনাকে অবশ্যই নীচে মন্তব্য করে আমাদের জানান। শেষ অবধি, যদি আপনি Article পছন্দ করেন (Ishwar Chandra Vidyasagar Biography in Bengali), তবে অবশ্যই Article টি সমস্ত Social Media Platforms এবং আপনার বন্ধুদের সাথে Share করুন।