আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আন্দোলনের ইতিহাস জানেন কি

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আন্দোলনের ইতিহাস জানেন কি : বন্ধুরা এই তথ্যটি হয়তো অনেকেই জানেন ২১ ফেব্রুয়ারি প্রতি বছর খুবই ধুমধাম ভাবে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে । তবে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে এই দিনটির পিছনের ইতিহাস হয়তো অনেকের অজানা। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানাবিধ ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রকে একসূত্রে গেঁথে তুলতে জাতিসংঘ এমন একটি দিনের প্রচলন শুরু করেছে যা সত্যি উল্লেখ করার মতো। আমরা এই দিনটিকে কেন এত গুরুত্ব এর সাথে পালন করি , বাংলা ভাষাভাষীর মানুষ হিসেবে আমাদের এর প্রকৃত সত্য জানাটা অত্যন্ত আবশ্যক.

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আন্দোলনের ইতিহাস

টেলিগ্রাম এ জয়েন করুন
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আন্দোলনের ইতিহাস
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আন্দোলনের ইতিহাস

১৯৯৯ সালে UNESCO এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে এই দিনটিকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হতো। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এপার বাংলাতেও ভাষা শহিদ দিবস হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। ভাষাকে কেন্দ্র করে এক অভূতপূর্ব আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে। যা বর্তমানে বাংলাদেশে নামে পরিচিত। আর সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল বাঙালি জাতি। সেই লড়াইকে জয় করেই বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কতিপয় কয়েকজন বাঙালি.

ভাষা আন্দোলন এর প্রথম বীজ বপন

বন্ধুরা এই ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস আমাদের বাঙালি এবং বাংলাদেশের অনেকেরই হয়তো জানা। কিন্তু এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরির পেছনে রয়েছে আরও অনেক সংগ্রামের ইতিহাস.

প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত দুটি ভূখণ্ডের দুটি ভিন্ন ভাষার জাতিসত্তাকে মিলিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম থেকেই মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে সূচনা হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের, আর এই ভাষা আন্দোলনকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হয়.

ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত

১৯৪৭ সালে যখন দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছিল তার আগেই আসলে শুরু হয়েছিল ভাষা নিয়ে বিতর্ক। ভারত বিভাজনের ঠিক একমাস পরেই ১৫ সেপ্টেম্বর পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষাকে অন্যতম ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি ওঠে। উর্দু এবং ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। আর সেই লক্ষ্যেই ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের সংসদে একটি বিবৃতি দেওয়া হয় বিরোধী দলগুলির তরফে.

ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন ও আহমদ রফিক তাদের ভাষা আন্দোলন-ইতিহাস ও তাৎপর্য বইয়ে লিখেছেন, – “প্রথম লড়াইটা প্রধানত ছিল সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনেই সীমাবদ্ধ”। আবদুল মতিন ও আহমদ রফিক লিখেছেন, “ভাষা আন্দোলন বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়।…….এর সূচনা মূল আন্দোলন শুরু হওয়ার কয়েক দশক আগেই এবং বাঙালি মুসলমানের সেকুলার জাতিয়তাবোধ এর পেছনে কাজ করেছে.”

সেসময় বাঙালী মুসলমান সাহিত্যিক, শিক্ষক, রাজনীতিবিদদের মধ্যে বাংলা, উর্দু, আরবি ও ইংরেজি এই চারটি ভাষার পক্ষ-বিপক্ষে নানান মত ছিল.

ভাষা বিতর্কের সূচনা

১৯৪৭ সালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর জিয়াউদ্দিন আহমেদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেছিলেন। তখন ভাষা নিয়ে বিতর্ক আবারো জেগে উঠেছিলো। ততদিনে মুসলিম বাঙালীদের আত্ম-অন্বেষণ শুরু হয়ে গিয়েছিলো.

পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন নিশ্চিত হওয়ার পর উর্দু-বাংলা বিতর্ক আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সেসময়কার গুরুত্বপূর্ন ‘মিল্লাত’ পত্রিকায় এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, “মাতৃভাষার পরিবর্তে অন্য কোন ভাষাকে রাষ্ট্রভাষারূপে বরণ করার চাইতে বড় দাসত্ব আর কিছু থাকিতে পারে না.”

পুঞ্জীভূত বিদ্বেষ

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের কয়েক মাসের মধ্যেই পাকিস্তানের প্রথম মুদ্রা, ডাকটিকেট, ট্রেনের টিকেট, পোস্টকার্ড ইত্যাদি থেকে বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দু ও ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের এই ঘোষণায় পর ঢাকায় ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীদের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়.

কমিশনের বাঙালী কর্মকর্তারা সরকারি কাজে বাংলা ভাষার প্রয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলেন। পাকিস্তান গঠনের সময় পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী, পরবর্তীতে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিমুদ্দিন ১৯৪৮ সালে আইন পরিষদের অধিবেশনে বলেছিলেন, ভাষা সম্পর্কিত বিতর্ক শুরু হওয়ার আগেই এসব ছাপা হয়ে গেছে। যদিও তার এই বক্তব্য সবাই গ্রহণ করেনি.

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

ধীরে ধীরে অর্থনীতি ও রাজনীতিও সেই বিতর্কের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালে দৈনিক আজাদি পত্রিকায় লেখক সাংবাদিক আবদুল হক লিখেছিলেন, “উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি উর্দু-শিক্ষিতই চাকুরীর যোগ্যতা লাভ করবেন, এবং প্রত্যেকটি বাংলা ভাষীই চাকুরীর অনুপযুক্ত হয়ে পড়বেন”.

বাংলাভাষীদের আরও উদ্বেগ ছিল দুই হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত দুটি ভূখণ্ডের মানুষের সাংস্কৃতিক পার্থক্য নিয়ে। শুধু ধর্ম তাদের মধ্যে কতটুক যোগসূত্র স্থাপন করতে পারবে সেনিয়ে ভাবনা ছিল অনেকের.

ভাষা আন্দোলন বহিঃপ্রকাশের কারণ

1. জিন্নাহ একনায়কতন্ত্র মনোভাব

তৎকালীন পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাংলাভাষীরা উর্দুভাষীদের চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। তারপরও ১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ পূর্ব পাকিস্তান সফরে এসে রেসকোর্স ময়দানে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এক সমাবেশে স্পষ্ট ঘোষণা করেছিলেন যে ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা’.

সেই সমাবেশেই উপস্থিত অনেকেই সাথে সাথে প্রতিবাদ করে ওঠেন। এই ঘোষণাকে বলা যেতে পারে নতুন রাষ্ট্র সম্পর্কে বাঙালীর স্বপ্নভঙ্গের সূচনা। জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে শুরু থেকে অনমনীয় মনোভাব প্রকাশ করেছেন.

2. বাংলা ভাষীদের অবিশ্বাস

উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পেছনে বাঙালীদের উপর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রভুত্ব কায়েম করা ও শোষণের অভিসন্ধি বলে মনে করা হয়েছিল। বাঙালীদের মনে পাকিস্তানের প্রতি অবিশ্বাসের ভীত তৈরি হয়েছিল.

3. সাংস্কৃতিক পার্থক্য

ভাষা ও সাংস্কৃতিক পার্থক্য আরও জোরালোভাবে প্রতীয়মান হচ্ছিল। ধর্ম নয় বরং বাঙালীদের জাতিয়তাবাদের ধারনা স্পষ্ট হতে শুরু করেছিল। অন্যদিকে তখনকার উর্দুভাষীরা বাঙালীর সংস্কৃতিকে ‘হিন্দুয়ানী’ বলে মনে করাটা বাংলা ভাষার প্রতি তাদের বিতৃষ্ণার আরেকটি কারণ.

আন্দোলন এর প্রথম পর্যায়

তারপরেই ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ বাংলাদেশে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের কায়েদ-ই-আজম মহম্মদ আলি জিন্না সরাসরি সেই দাবিকে নস্যাৎ করে দেন। এবং জানান পাকিস্তানে উর্দু ছাড়া আর কোনও ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। এবং যারা এই ধরনের দাবি তুলবেন তাঁদের এদেশের শত্রু বলে চিহ্নিত করা হবে.

রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন

সেসময় বুদ্ধিজীবীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে মাতৃভাষার পরিবর্তে উর্দু চাপিয়ে দিলে বাংলাভাষী পরবর্তী প্রজন্ম অশিক্ষিত হয়ে পড়বে, বাংলা ভাষার সত্ত্বা ঝুঁকিতে পরবে। স্বাধীনভাবে মাতৃভাষার চর্চার ক্ষেত্রে এটিকে বড় আঘাত বলে মনে করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে বাঙালির মনে ক্ষোভের অনুভূতি তখন থেকেই দানা বাঁধতে থাকে। সেই সালেই শেষের দিকে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়।

সেসময়কার একটি ইসলামি সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিসের নূরুল হক ভূঁইয়া, তৎকালীন সংসদ সদস্য সামসুল হক, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগের প্রতিষ্ঠাতা অলি আহাদ, পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ তোয়াহা সহ অনেকেই এর সদস্য ছিলেন যারা শুরুতে গোপনে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন.

ভাষা আন্দোলন এর শুরু

সেই সময় থেকেই পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে ভাষাকে কেন্দ্র করে ধিকধিক করে আগুন জ্বলতে শুরু করে। পাকিস্তানের নাগরিক হয়েও পাকিস্তান বিরোধিতায় ধীরে ধীরে গলা ফাটাতে শুরু করে জনতার একটি অংশ। যার ঠিক চার বছর পরে ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্যাস, তারপর থেকেই ঢাকা শহরে আন্দোলন আরও তীব্রতর হয়। মিটিং-মিছিল সবই পরপর চলতে থাকে.

ভয়ঙ্কর অগ্নি স্ফুলিঙ্গের জন্ম

জিন্নাহ’র মৃত্যুর পরও রাষ্ট্রভাষা নিয়ে নানা রকম প্রস্তাব, পাল্টা প্রস্তাব চলতে থাকে। দেশভাগের পর থেকে ১৯৫২ সালের শুরু পর্যন্ত বাঙালীরা জোরালোভাবে রাষ্ট্রভাষা উর্দু সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধ মনোভাব ব্যক্ত করে গেছেন.

প্রতিক্রিয়া হিসেবে থেমে থেমে আন্দোলন চলেছে। তবে এই আন্দোলনে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অগ্নি স্ফুলিঙ্গের জন্ম হয় যখন বায়ান্নর ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের অ্যাসেম্বলিতে উর্দুকেই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়.

পূর্ব-বঙ্গের অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকায় সফরে এসে খাজা নাজিমুদ্দিন পল্টনে এক সমাবেশে জিন্নাহ’র কথাই পুনরাবৃত্তি করেন। সেসময়ও একইভাবে জোরালো প্রতিবাদে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান ওঠে.

রণক্ষেত্র ঢাকা

ঢাকা শহর কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল, আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল ছাত্রছাত্রীরা। বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ শুরু হয় ছাত্র-ছাত্রীদের। এবং এই বিক্ষোভ আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই পাঁচ জন ছাত্র পুলিশের গুলিতে নিহত হযন। তারা ছিলেন মহাম্মদ সালাউদ্দিন, আবদুল জব্বর, আবুল বরকত, রফিকুদ্দিন আহমেদ ও আবদুস সালাম.

২১ ফেব্রুয়ারির দিনটিতে কি ঘটেছিল

বলা হয়ে থাকে রাজনৈতিক কারণে নেয়া খাজা নাজিমুদ্দিনের অবস্থান ও তার বক্তব্য ভাষা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। তার ঘোষণায় পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মনে বঞ্চনার অনুভূতি আরও জোরালো হয়ে জেগে ওঠে.

খাজা নাজিমুদ্দিনের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে পরদিন থেকে পূর্ব-পাকিস্তানে শুরু হয় স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট ও বিক্ষোভ মিছিল। যাতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা.

ভাসানীর নেতৃত্বে সম্মেলনে অংশ নেন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক, সংস্কৃতিকর্মী এবং পেশাজীবী সম্প্রদায়ের মানুষজন। ২১শে ফেব্রুয়ারি সাধারণ ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়েছিল। ধর্মঘট প্রতিহত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিলো। যা লঙ্ঘন করেই জন্ম হয়েছিল শহীদ দিবসের.

১৯৫২ সালের সেই দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র হিসেবে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্মরত ছিলেন মুহাম্মদ মাহফুজ হোসেন। বছর তিনেক আগে বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাতকারে তার বর্ণনায় ফুটে উঠেছে সেদিনকার চিত্র.

সেই সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, “একুশে ফেব্রুয়ারি দুপুরে গুলিবিদ্ধ তিনজনকে হাসপাতালে গ্রহণ করি আমি। কপালে গুলিবিদ্ধ রফিককে দেখেই মৃত ঘোষণা করা হয়, আর উরুতে গুলিবিদ্ধ বরকত মারা যান রাতে, আমার চোখের সামনেই.”

ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছেই গুলিবর্ষণ হয়েছিল শিক্ষার্থীদের উপ.

তিনি বলছিলেন, “আমরা তখন বাইরে থেকে বহু আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। আমরা শুনেছিলাম বহু মানুষ গুলিতে আহত হয়েছে। মুহূর্তেই ইমারজেন্সি ওয়ার্ড পূর্ণ হয়ে যায়। আহতদের অনেকেই মুমূর্ষু, তাদের সঙ্গে আসা মানুষজন আর চিকিৎসকে ঠাসাঠাসি হয়ে যায় জরুরী বিভাগ.”

ভাষা আন্দোলনে কতজন শহীদ হয়েছিলেন সেবিষয়ে সঠিক সংখ্যা এখনো পাওয়া যায় না। সেদিন এবং পরদিন পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার এবং শফিউর ছাড়াও আরো অনেকে শহীদ হয়েছিলেন বলে ভাষা আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন বইয়ে উঠে এসেছে.

স্বীকৃতি আদায়

এদের আত্ম বলিদানের পরেই পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। এবং ১৯৫৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম সংবিধান পাস হয়, যেখানে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল.

রাষ্ট্রপুঞ্জে দাবি

এই ঘটনা প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে কানাডাবাসী রফিকুল ইসলাম নামে এক বাঙালি রাষ্ট্রপুঞ্জের তৎকালীন মহাসচিব কোফি আন্নানকে একটি চিঠি লেখেন। সেখানে তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় এই প্রস্তাব উত্থাপিত হলে প্রায় সমস্ত দেশের সম্মতিক্রমেই তা স্বীকৃত হয়। এবং ১৯৯৯ সাল থেকে প্রত্যেক বছর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়

স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বীজ বপন

এই হত্যাকাণ্ড মাতৃভাষার অধিকারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে দমিয়ে দেয়নি। এই আন্দোলনেই পরিষ্কার হয়ে উঠেছিল যে দুই হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত দুটি ভূখণ্ডের দুটি ভিন্ন ভাষার জাতিসত্তাকে মিলিয়ে সৃষ্টি করা রাষ্ট্রের অধিবাসীদের মনে এক হওয়ার অনুভূতি সম্ভবত জাগ্রত হবে না.

তবে এই ঘটনার পরও দুই বছরের বেশি সময় পরে, ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান সংসদ বাংলাকে একটি রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকার করে প্রস্তাব গ্রহণ করে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি কার্যকর হতে লেগেছিল আরও দুই বছর। মাতৃভাষা নিয়ে এই আন্দোলনেই বীজ বপন হয়েছিল পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের।

মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি

এই প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ্য যে এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতার যুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। এবং যার দেড় দশকের মধ্যেই পাকিস্তানের শাসনের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে বিশ্ব মানচিত্রে.

আমাদের শেষ কথা

তাই বন্ধুরা, আমি আশা করি আপনি অবশ্যই একটি Article পছন্দ করেছেন (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আন্দোলনের ইতিহাস জানেন কি)। আমি সর্বদা এই কামনা করি যে আপনি সর্বদা সঠিক তথ্য পান। এই পোস্টটি সম্পর্কে আপনার যদি কোনও সন্দেহ থাকে তবে আপনাকে অবশ্যই নীচে মন্তব্য করে আমাদের জানান। শেষ অবধি, যদি আপনি Article পছন্দ করেন (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস), তবে অবশ্যই Article টি সমস্ত Social Media Platforms এবং আপনার বন্ধুদের সাথে Share করুন।

Leave a Comment