তুলসী পাতার উপকারিতা, ব্যবহার এবং ক্ষতিকর দিক – Basil Benefits, Uses and Side Effects in Bengali

তুলসী পাতার উপকারিতা, ব্যবহার এবং ক্ষতিকর দিক – Basil Benefits, Uses and Side Effects in Bengali : আমরা সবাই জানি চিকিৎসা বিজ্ঞান এ ঔষধ এর মূল উৎস বিভিন্ন ধরনের গাছ.প্রাচীন চিকিৎসা বিজ্ঞান এ ভারতবর্ষের চিকিৎসা ব্যবস্থা খ্যাতির শিখরে পৌঁছেছিল. তার প্রধান কারণ প্রাচীন ভারতবর্ষের ঋষি মুনিরা উদ্ভিদ বিদ্যায় বিশেষ জ্ঞান অর্জন করেছিল এবং সেই জ্ঞান দিয়ে মানুষের চিকিৎসার কাজে লাগিয়েছিলো.

কিন্তু বর্তমান যুগে আমরা গাছের উপকারী গুন সম্পর্ক এ কম জানি.আধুনিক ইন্টারনেট যুগে সব কিছুই সহজ এ পাওয়া যায় বলে গাছের গুনাগুন কে অস্বীকার করি. আজ আমরা এমন গাছ সম্পর্কে আলোচনা করবো যার উপকার সম্পর্কে আপনার ধারণা একদম পাল্টে যাবে. আসুন শুরু করি….

বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Plantae
(শ্রেণীবিহীন): Asterids
বর্গ: Lamiales
পরিবার: Lamiaceae
গণ: Ocimum
প্রজাতি: O. tenuiflorum
দ্বিপদী নাম
Ocimum tenuiflorum
  • গাছের নাম: তুলসী

Table of Contents

তুলসীর অর্থ কি? – What does Tulsi Mean In Bengali?

  • তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই.
  • তুলসীর ইংরেজি নাম : holy basil, বা tulasī
  •  বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum Sanctum (একটি ঔষধিগাছ)।

তুলসী পাতার ইতিহাস – History of Basil leaves In Bengali

তুলসী গাছ লামিয়াসি পরিবারের অন্তর্গত একটি সুগন্ধী উদ্ভিদ।হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসাবে সমাদৃত। ব্রহ্মকৈবর্তপুরাণে তুলসীকে ‘সীতাস্বরূপা’, স্কন্দপুরাণে ‘লক্ষীস্বরূপা’, চর্কসংহিতায় ‘বিষ্ণুপ্রিয়া’, ঋকবেদে ‘কল্যাণী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে.

তুলসী পাতার প্রকার

 তুলসী হল মূলতঃ পুদিনা গাছেরই একটি ধরণ যার আবার নানারকমের ভাগ আছে। যেমন, রাম তুলসী, কৃষ্ণ তুলসী ও বান তুলসী। তবে এই প্রত্যেকটি ধরণের তুলসী গাছই বিভিন্ন রকমের অসুস্থতাকে চিকিৎসা করতে সমানভাবে কার্যকরী.

তুলসী পাতার কোথায় পাওয়া যায়?

 প্রায় ৫০০০ বছর ধরে এই তুলসী গাছ ভারতের উত্তর-মধ্য-পূর্ব অঞ্চলে চাষ করা হয়ে আসছে এবং এখন ভারতবর্ষের সমস্ত এলাকায় এটি চাষ করা হয়। এমনকি, এখন বিভিন্ন ইতালীয় ও অন্যান্য খাদ্য প্রণালীতে তুলসী পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে.

আজকের এই পোস্টে আমরা আপনাকে তুলসী পাতা সম্পর্কে নানা রকমের তথ্য বিশেষ করে তুলসী পাতার উপকারিতা ও তুলসী পাতার গুণাগুণ সম্পর্কে জানাতে চাই। আসুন দেখে নেওয়া যাক.

তুলসী পাতার ঔষধ উপাদান 

তুলসী পাতায় রয়েছে Anti Inflammatory ও Anti Oxidant উপাদান যা ক্যান্সার, ডায়বেটিস বা হৃদরোগের মত নানা মারণাত্মক রোগের বিরুধ্যে শক্তিশালী রূপে লড়াই করতে পারে। তুলসী পাতায় এতখানি ঔষধিক গুণ রয়েছে যে স্বয়ং এই পাতাকেই একটি ওষুধ বলে গণ্য করা হয়.

তুলসী পাতার উপকারিতা – Benefits of Basil leaves In Bengali

টেলিগ্রাম এ জয়েন করুন
তুলসী পাতার উপকারিতা - Benefits of Basil leaves In Bengali
তুলসী পাতার উপকারিতা – Benefits of Basil leaves In Bengali

প্রথমে আমরা দেখবো তুলসী কোন কোন রোগের জন্যে কিভাবে এই তুলসী পাতার উপকার আপনি পেয়ে থাকেন.

১. মানসিক চাপ

বেশিরভাগ দেশে মানসিক চাপ মুক্ত রাখার জন্য তুলসীকে একটি অসাধারণ ঔষধি হিসেবে ধরা হয়। এছাড়া এই পাতায় রয়েছে Anti Inflammatory ও রোগ প্রতিরোধ করার উপাদান যা সারাদিনের ক্লান্তি ও চাপ নিমেষের মধ্যে দূর করতে পারে। তুলসী শরীরের Cortisol মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে ও অতিরিক্ত উত্তেজনা ও চাপ থেকে মুক্তি দেয়। স্বাভাবিকভাবেই মানসিক চাপ কমলে আপনি যেকোনো বিষয়ে নিখুঁতভাবে লক্ষ্য রেখে কাজ করতে পারবেন। শরীরে নানারকমের রাসায়নিক চাপ থেকেও তুলসী পাতা উপকারিতা প্রদান করে । তুলসী পাতার দ্বারা শরীরের অন্তর্নিহিত শক্তি জেগে ওঠে ও ধীরে ধীরে চাপ কমে আসে .

. গলা ব্যথা

গলা ব্যথা কমাতে তুলসীর জুড়ি মেলা ভার। শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমাতেও তুলসী পাতা বেশ উপকারী। একটি তুলসী পাতা দিয়ে ফুটিয়ে রোজ গার্গেল করলে গলা ব্যথা নিমেষে সেরে যায়.

. ক্যান্সার 

ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করতে তুলসী পাতা দারুণ উপকারী। তুলসী পাতায় রয়েছে Radio Protective উপাদান যা টিউমারের কোষগুলিকে মেরে ফেলে। তুলসী পাতায় থাকা Phytochemicals যেমন রোসমারিনিক এসিড, মাইরেটিনাল, লিউটিউলিন এবং এপিজেনিন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করতে অসামান্যভাবে কার্যকরী। অগ্নাশয়ে যে টিউমার কোষ দেখা দেয় তা দূর করতেও তুলসী পাতা দারুণ উপকারী। Breast Cancer রোধ করতেও তুলসী পাতা দারুণ উপকারী.

. ডায়বেটিস

Type ২ ডায়বেটিসে ভোগা মানুষদের জন্যে তুলসী পাতা ইন্সুলিন উৎপাদনের কাজ করে। রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে প্রতিদিন খাওয়ার আগে তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যেস করুন। তুলসী একটি Anti Diabetes ওষধির কাজ করে। তুলসীতে থাকা স্যাপোনিন, ত্রিতারপিনিন ও Flavonoids ডায়বেটিস রোধ করতে দারুণ কার্যকরী.

. সর্দি কাশি কমাতে

ঠাণ্ডা লেগে সর্দি ও কাশি হলে তুলসী পাতা একটি ওষুধের কাজ করে। বুকে কফ বসে গেলে সকালবেলায় রোজ এক পাত্র জলে তুলসী পাতা, আদা ও চা পাতা ভালো করে ফুটিয়ে তাতে মধু ও লেবু মিশিয়ে পান করুন। খুব শীঘ্রই আরাম পাবেন.

. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে তুলসী পাতায় রয়েছে অসাধারণ রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যেমন Asthma, ফুসফুসের সমস্যা, Bronchitis, ইত্যাদি। ঠাণ্ডা লাগলে বা সর্দি কাশি হলে বুকে কফ বসে গেলে তুলসী পাতার দ্বারা তা তরল করে খুব সহজে শরীর থেকে দূর করা যায়। এমনকি, জ্বরের সময়ও তুলসী পাতা খুব উপকারী। বর্ষাকালে এই তুলসী পাতা ও এলাচ ভালো করে জলে ফুটিয়ে সেই জল পান করলে খুব সহজেই নানারকমের রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বিভিন্ন সার্জারির পর বা কোনো ক্ষতস্থানে তুলসী পাতা বেটে লাগালে তা বেশ তাড়াতড়ি শুকিয়ে ওঠে.

. ওজন কমানো

তুলসী পাতার দ্বারা রক্তে সুগারের মাত্রা ও কোলেস্টরল দুটোই রোধ করা যায় যার ফলে খুব সহজেই আপনি ওজন বৃদ্ধির হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তার ওপর Cortisol মাত্রা কমার ফলে যখন আপনার মানসিক চাপ দূর হয়, তখন ওজন কমানো আরো সহজ হয়ে যায়। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে তুলসী দিয়ে তৈরী ২৫০ মিলিগ্রামের একটি Capsules  প্রতিদিন খাওয়ার ফলে ওবেসিটি ও লিপিড প্রোফাইল মারাত্মক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়.

. দাঁতের স্বাস্থ্য

তুলসী দিয়ে দাঁতের জন্যে নানারকমের Toothpaste ও মাউথ ওয়াশ তৈরী করা যায় কারণ এতে রয়েছে Anti Bacterial উপাদান। এছাড়াও, এতে রয়েছে Anti Microbial উপাদান যা দাঁতের যেকোনো সমস্যা, মাড়ির সমস্যা ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে.

. চোখের সমস্যা

চোখে খুব সহজেই নানারকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন চুলকানি, লাল হয়ে যাওয়া, আঞ্জনি, জল বা পিচুটি কাটা, ইত্যাদি। তুলসীতে থাকা Anti Inflammatory উপাদানগুলি চোখের এই যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এমনকি, ছানির সমস্যা বা দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দূর করতেও তুলসী পাতা খুব কার্যকরী.

১০. মাথা যন্ত্রনা

মাথা ব্যাথা কমাতে বহু বছর ধরে কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে আসছে তুলসী পাতা। নানারকম ভাবে তুলসী পাতার রস বা গুঁড়ো Herbal চায় মিশিয়ে প্রতিদিন দুবার করে পান করলে মাথাব্যথা নিমেষে কমে যায়.

১১. হার্টের জন্যে ভাল

বর্তমানে হার্টের সমস্যা ভীষণভাবে বেড়ে গেছে যা মৃত্যুরও বড়  কারণ। হার্টের রোগ জন্ম দেয় Hypertension, উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টরলের। তুলসী পাতার দ্বারা রক্তের জমাট বাধার সমস্যা দূর করা যায় ও Heart Attack রোধ করা যায়। হার্টের অন্যান্য সমস্যাও সহজে রোধ করতে পারে তুলসী পাতা। কোলেস্টরল ও Fat কমাতে তুলসী পাতা খুব উপকারী.

১২. কিডনি স্টোন

তুলসীতে থাকা Anti OxidantAnti Bacterial উপাদান শরীরের ভেতর থেকে নানারকমের বিষক্রিয়া পদার্থ বের করে আনতে সাহায্য করে। এর ফলে Dehydration কমে যায় ও কিডনির কার্যকারিতা সচল অবস্থায় থাকে। এর ফলে কিডনি Stone রোধ করা যায়.

১৩. পেটের স্বাস্থ্য

পেটের জন্য তুলসী পাতার মত কোনো ওষুধ নেই। পেট ব্যাথা, অম্বল, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সবকিছুর বিরুধ্যে তুলসী পাতা দারুণ কার্যকরী। পেটে আলসারের বিরুধ্যেও তুলসী পাতার নানা ভূমিকা প্রমাণিত হয়েছে। পেটে ব্যথা হলে ২০ মিলিলিটার জলে তুলসী পাতা ভালো করে ফুটিয়ে তা ১০ মিলিলিটার কমিয়ে এনে পান করুন। এতে পেট ব্যথা ও Hyper Acidity খুব সহজে কমে যায়.

১৪. লিভারের স্বাস্থ্য

বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে তুলসী পাতায় রয়েছে Hepato Protective উপাদান যা লিভার নষ্ট হওয়াকে খুব কার্যকরী রূপে রোধ করতে পারে। লিভারের বিষক্রিয়াকরণ রোধ করতে তুলসী পাতা বেশ উপকারী কারণ এতে রয়েছে Cytochrome P ৪৫০। তবে লিভারের সমস্যা থাকলে ডাক্তারের সাথে একবার কথা বলে তবেই তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যেস করুন.

১৫. ফোলা ভাব দূর করে

বাতের ব্যথা থেকে শুরু করে হাড় বা জয়েন্টের যন্ত্রনা যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় তুলসী পাতা। এছাড়া শরীরে ফোলাভাব দূর করতে তুলসী পাতায় থাকা Eucalyptus বেশ কার্যকরী।  পেইন কিলার হিসেবেও তুলসী পাতা দারুণ ভূমিকা নিয়ে থাকে.

১৬. রক্ত নালী

তুলসী Anti Inflammatory উপাদান থাকার ফলে মাংস পেশিতে রক্ত নালী খুব সচল ও সুরক্ষিত ভাবে রক্ত বয়ে নিয়ে যেতে পারে। এর ফলে শরীরের মাংস পেশিতে ব্যাথা হয় না। এমনকি রক্তে যাতে কোনো রকম জমাট না বাধে তার জন্যেও তুলসী দারুন কাজ করে।

১৭. ত্বকের জন্য তুলসী পাতার উপকারিতা – Skin Benefits of Basil Leaves in Bengali

তুলসী পাতায় রয়েছে Anti Microbial উপাদান যা ত্বকের নানা রকমের সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। আসুন দেখে নেওয়া যাক কিভাবে:

ক) ব্রণ

তুলসী পাতা রক্তের নানারকমের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে তা বিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য করে কারণ এতে রয়েছে Anti Bacterial ও Anti Fungal উপাদান.

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

তুলসী পাতার একটি পেস্ট বানিয়ে তা চন্দন বা গোলাপ জলের সাথে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিটের জন্যে রেখে দিন। তারপর সেটি জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া তুলসী পাতা দিয়ে চা তৈরী করে পান করলেও সমানভাবে ব্রণর বিরুদ্ধে কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যায়.

এই প্রক্রিয়ার দ্বারা Blackheads, ব্রণর কালো ছোপ, দাগ এবং ব্রণ সবকিছু কমিয়ে আনা যায়। এই সত্যটি নানারকমের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে.

খ) ত্বকের সংক্রমণ

তুলসীতে রয়েছে Anti Biotic উপাদান যা ত্বকের নানারকমের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। এর সাহায্যে ত্বকে বি বা ই কোলাই-এর মত ব্যাকটিরিয়া বা Arthritis সহজে মিটে যায়.

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

২৫০ গ্রাম তুলসী পাতা জলে ভালো করে ফুটিয়ে তা তিল তেলের সাথে মিশিয়ে মুখে লাগালে তা ত্বকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে দারুণ কার্যকরী ভূমিকা নেয়। এছাড়া আরেকটি উপায় হল, তুলসী পাতা বেটে কয়েক ফোটা লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে সেটি ত্বকে লাগানো। এর ফলেও সংক্রমণ অনায়াসে কমে আসে.

তুলসী পাতায় থাকা Anti Microbial ও Anti Fungal উপাদান ত্বকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে লড়াই করে। এর ফলে নানারকমের আয়ুর্বেদিক ওষুধ তুলসী পাতা দিয়ে তৈরী হয়ে থাকে.

গ) এক্সিমা এবং শ্বেতী

প্রতিদিন তুলসী পাতা খেলে শ্বেতী রোগের মত সমস্যা অনায়াসে দূরে চলে যায়। শুধু তাই নয়, এর দ্বারা এক্সিমার মত রোগও বেশ ভালোভাবে সেরে ওঠে। নানা রকমের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে তুলসী পাতায় থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট এক্সিমার বিরুদ্ধে অসাধারণ ভাবে লড়াই করে। তবে ত্বকে তুলসী পাতা লাগানোর আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না.

১৮. চুলের জন্য তুলসী পাতার উপকারিতা – Hair Benefits of Basil Leaves in Bengali

স্বাস্থ্য ও ত্বক ছাড়াও তুলসী পাতার উপকারিতা চুলের ক্ষেত্রেও দারুণভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তুলসী পাতা চুলের গোড়া মজবুত করে ও চুলের নানারকমের সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করে। দেখে নেওয়া যাক কিভাবে:

ক) চুল পড়া বন্ধ করে

চুলের গোড়া মজবুত করে চুল পড়ার মত সমস্যা দূর করে তুলসী পাতা। এর প্রধান কারণ হল তুলসী পাতায় থাকা এন্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান.

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

কয়েক ফোটা নারকেল তেলে খানিকটা তুলসী পাতা বাটা মিশিয়ে মাথার স্ক্যাল্পে লাগান। ৩০ মিনিট রেখে চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে চুলের গোড়া মজবুত হবে, স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে ও চুল পড়ার সমস্যা ধীরে ধীরে চলে যাবে.

তুলসী পাতার এই গুণাগুণ থাকার ফলে এটিকে হারবাল ও আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে চুলের ওযুধ বলে গণ্য করা হয়.

খ) খুশকি দূর করে

তুলসী পাতায় রয়েছে এমন কিছু বিশেষ উপাদান যা চুলের চার রকমের সমস্যার বিরুদ্ধে কাজ করে যার ফলে চুলে খুশকি হতে পারে। চুলে খুশকির সমস্যা হলে অবশ্যই তুলসী পাতা ব্যবহার করুন.

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

আপনার প্রতিদিনের চুলের তেলের সাথে একটু  তুলসী পাতার রস মিশিয়ে সেটি ভালো করে মাথার স্ক্যাল্পে লাগান। এর ফলে স্ক্যাল্পের শুষ্কতা দূর হয় ও খুশকি হওয়া রোধ করা যায়। এমনকি, মাথায় চুলকুনি হলেও তা কমে যায়।চুলের খুশকি দূর করে, চুলকে নতুন করে উজ্জ্বলতা প্রদান করে ও রুক্ষভাব দূর করতে সাহায্য করে তুলসী পাতা.

গ) পাকা চুলের সমস্যা দূর করে

পাকা চুলের সমস্যা দূর করতেও দারুণ উপযোগী এই তুলসী পাতা।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

কয়েকটি তুলসী পাতা এক পাত্র জলে ভিজিয়ে সারারাত রেখে দিন। তারপর সেটি বেটে তার মধ্যে আমলকির গুঁড়ো মিশিয়ে সেটি চুলে ভালো করে গোড়া থেকে লাগিয়ে দিন। সকালে উঠে ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন.এই প্রক্রিয়াটির দ্বারা খুব সহজেই পাকা চুলের সমস্যা দূর হবে। তাই নানা রকমের চুলের তেল ও শ্যাম্পুতে তুলসী পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক – Side Effects of Basil leaves In Bengali

তুলসী পাতা যতই উপকারী হোক না কেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি এড়িয়ে চলাই ভালো। দেখে নিন ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে তুলসী পাতা খাওয়া উচিত নয়:

ক) গর্ভাবস্থা বা স্তন্যপান করার সময়

গর্ভাবস্থার সময় বা মা হওয়ার পর স্তন্যপান করানোর সময় সামান্য তুলসী পাতা খেলে কোনো ক্ষতি হয় না, কিন্তু অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে নানা রকমের জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এই সময় তুলসী পাতা না খাওয়াই ভালো। এছাড়া অতিরিক্ত তুলসী পাতা মহিলাদের বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট পরিমাণে এটি ব্যবহার করা ভালো.

খ) রক্তপাতের সমস্যা 

অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে শরীরে রক্তের প্রবাহ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার ফলে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত জমাট হওয়ার প্রবণতা নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে কোনোরকম Surgery বা কাটা ছেঁড়া হলে ওই সময় তুলসী পাতা এড়িয়ে চলুন। এছাড়া সার্জারির দু সপ্তাহ আগে থেকেও তুলসী পাতা খাওয়া বন্ধ করা উচিত.

গ) নিম্ন রক্তচাপ 

তুলসী পাতায় অতিরিক্ত পটাসিয়াম থাকার ফলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। তাই আপনার যদি নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে তুলসী পাতা না খাওয়াই ভালো.

তুলসী পাতা খাওয়া কি ভাবে অভ্যাস করবেন?

তুলসী পাতা ব্যবহার করা খুব সহজ এবং আপনি নানা রকম ভাবে এই তুলসী পাতা ব্যবহার করতে পারেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক কিভাবে:

  • প্রতিদিন খালি পেটে কয়েকটি তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যেস করতে পারেন। এতে নানারকমের অসুস্থতা দূর করা যায়.
  • তুলসী পাতা দিয়ে দারুণ এক রকমের চা তৈরী করা যায়। এক পাত্র জলে তুলসী পাতা, আদা ও চা পাতা ফুটিয়ে অল্প মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন.
  • আপনার পছন্দের যে কোনো খাদ্যে তুলসী পাতা কুচি কুচি করে কেটে মিশিয়ে নিতে পাবেন.
  • তুলসী পাতা রোদে শুকিয়ে প্রতিদিন অল্প অল্প করে খেতে পারেন.
  • আপনি বাড়িতে খুব সহজেই তুলসী গাছ লাগাতে পারেন। তুলসী গাছের যত্ন নেওয়া খুবই সহজ.
  • তুলসী পাতা ব্যবহার করার আগে দেখে নেবেন যেন সেই পাতায় কালো দাগ ছোপ না থাকে.
  • আপনি অনায়াসে তুলসী পাতা চার দিন ধরে ফ্রিজে রেখে টাটকা অবস্থায় ব্যবহার করতে পারেন.

আমাদের শেষ কথা

তাই বন্ধুরা, আমি আশা করি আপনি অবশ্যই একটি Article পছন্দ করেছেন (তুলসী পাতার উপকারিতা, ব্যবহার এবং ক্ষতিকর দিক – Basil Benefits, Uses and Side Effects in Bengali)। আমি সর্বদা এই কামনা করি যে আপনি সর্বদা সঠিক তথ্য পান। এই পোস্টটি সম্পর্কে আপনার যদি কোনও সন্দেহ থাকে তবে আপনাকে অবশ্যই নীচে মন্তব্য করে আমাদের জানান। শেষ অবধি, যদি আপনি Article পছন্দ করেন (তুলসী পাতার উপকারিতা), তবে অবশ্যই Article টি সমস্ত Social Media Platforms এবং আপনার বন্ধুদের সাথে Share করুন।

Leave a Comment